রতন টাটার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কারা পেলেন: ভারতীয় শিল্পজগতের কিংবদন্তি রতন টাটার অকাল প্রয়াণে টাটা সাম্রাজ্য শোকাহত। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তাঁর সৎভাই নোয়েল টাটা, যিনি এখন টাটা ট্রাস্টের নতুন চেয়ারম্যান।
রতন টাটার মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে বড় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে, তাঁর অর্জিত সম্পদের ভবিষ্যৎ কী হবে? টাটা সাম্রাজ্যের একক নিয়ন্ত্রক হিসেবে তাঁর কোন সন্তান না থাকায় এই প্রশ্নটি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
দেশের শিল্প জগতের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব হলেও তিনি হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্টের শীর্ষ ১০ জনের তালিকায় স্থান পাননি। তিনি এই তালিকায় ৩৫০ নম্বরে অবস্থান করেছিলেন। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা তাঁর ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পরিধি নির্দেশ করে।
জামশেদজি টাটার উত্তরসূরি রতন টাটা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বিশাল সম্পত্তি কার হাতে যাবে, তা আগে থেকেই একটি ইচ্ছাপত্রে লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। এই ইচ্ছাপত্রে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করেছিলেন এবং তাদের হাতেই এই ইচ্ছাপত্র কার্যকর করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সম্প্রতি এই ইচ্ছাপত্র প্রকাশিত হয়েছে এবং তাতে তিনি কাকে কী দিয়েছেন, তা জানা গিয়েছে।
রতন তাঁর প্রিয় পোষ্য জার্মান শেফার্ড টিটোর সুখ-শান্তির জন্য তাঁর সম্পত্তি থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ করেছেন। ইচ্ছাপত্র অনুযায়ী, টিটোর সারাজীবন খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় যত্নের খরচ এই অংশ থেকে বহন করা হবে।
ছয় বছর আগে তাঁর প্রিয় পোষ্যকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে রতন টাটা টিটোকে নিজের জীবনে নিয়ে আসেন। টিটোর আগমন তাঁর জীবনে আবার নতুন উদ্দীপনা এনে দেয়। টিটো শুধুমাত্র একটি পোষ্যই ছিল না, বরং তাঁর একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী।
পশ্চিমে অনেকেই তাদের প্রিয় পোষ্যদের জন্য সম্পত্তি রেখে যাওয়ার চল রাখেন। ভারতে এমন ঘটনা খুব একটা দেখা যায় না। তবে রতন টাটা যেমন ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি পোষ্যপ্রেমিক হিসেবে বহু মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন এবং অনেক পথকুকুরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
মুম্বইয়ে প্রথম ২৪ ঘণ্টা খোলা পশু হাসপাতাল গড়ে তুলে পশুপ্রেমীদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন রতন টাটা। নিজের পোষ্যকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেন যে, ভারতেও এমন একটি সুবিধা থাকা জরুরি।
তিনি শুধু তার পোষ্যকেই নয়, বহু বছর ধরে যারা তার সেবা করেছিলেন, তাদেরও মনে রেখেছিলেন। রাঁধুনি রাজন ও পরিচারিকা সুব্বিয়াকে তিনি তার ইচ্ছাপত্রে উল্লেখ করে গিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি টিটোর সকল দায়িত্ব রাজন সাউয়ের উপর অর্পণ করেছেন।
প্রয়াত শিল্পপতি রতন টাটা শুধু ব্যবসায়েই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও অনেকের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার একজন খুব কাছের বন্ধু ছিলেন শান্তনু নাইডু। বয়সে ছোট হলেও শান্তনু রতনের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার পাশে ছিলেন।
আমার সারাজীবনের সঙ্গী, আমার প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে আমি এখন শূন্যতায় ভাসছি। তোমার স্মৃতি আমাকে সারাজীবন সঙ্গ দেবে।
রতন টাটা শান্তনু নাইডুর প্রতি তার আস্থা ও সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তিনি ‘গুডফেলোজ়’ স্টার্টআপ থেকে নিজের অংশীদারিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি, শান্তনুর উচ্চশিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
রতন টাটা তার নিজের ভাই জিম্মি টাটা, যিনি তাঁর মতোই অকৃতদার ছিলেন, এবং দুই সৎবোন শিরিন ও ডায়ানাকে তার সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে গেছেন। তাঁর বাকি সম্পত্তি তিনি টাটা ফাউন্ডেশনের নামে দান করে গেছেন, যা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হবে।
রতন তালুকদারের সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল মুম্বাইয়ের জুহু তারা রোডে অবস্থিত তাঁর দ্বিতল বাড়ি। এছাড়াও তিনি মুম্বাইয়ে একটি ২ হাজার বর্গফুটের বাংলোর মালিক। তাঁর স্থাবর সম্পত্তির পাশাপাশি, তাঁর নামে ৩৫০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। এছাড়াও, তিনি টাটা সন্সের একটি উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডার, এবং কোম্পানির মোট শেয়ারের ০.৮৩ শতাংশের মালিক।
রতন টাটার মুম্বইয়ের কোলাবাতে সমুদ্রের দিকে মুখ করা একটি বিলাসবহুল বাড়ি ছিল, যার আনুমানিক মূল্য ১৫০ কোটি টাকা। তিনি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি সংগ্রহ করেছিলেন, যার মধ্যে মার্সিডিজ থেকে শুরু করে স্বদেশী ন্যানো পর্যন্ত ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর এই গাড়ির সংগ্রহটি হয়তো পুণেতে কোনো জাদুঘরে রাখা হতে পারে অথবা নিলামে বিক্রি করা হতে পারে।
রতন টাটা অন্য শিল্পপতিদের তুলনায় অনেক বেশি দান করতেন। তিনি নিজের অনেক টাকা গরীবদের জন্য এবং দেশের উন্নতির জন্য খরচ করতেন। এজন্য তিনি বিশেষ একটা ফান্ডও তৈরি করেছিলেন।
শিল্পপতি রতন টাটার মৃত্যুর পর তাঁর বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নির্ধারণের দায়িত্ব তাঁর সৎবোন শিরিন ও ডায়ানা জিজিবয়, আস্থাভাজন আইনজীবী দারিয়াস খাম্বাটা এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেহলি মিস্ত্রির উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। মেহলি মিস্ত্রি, যিনি সাইরাস মিস্ত্রির তুতো বোন, রতন টাটার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।
জামশেটজি টাটার বংশধর রতন টাটা ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর, তৎকালীন বম্বেতে জন্মগ্রহণ করেন। রতনজি টাটার দত্তক পুত্র নাভাল ও সুনু টাটার পুত্র হিসেবে তিনি টাটা পরিবারের ঐতিহ্য বহন করেছেন। কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক হওয়ার পর ১৯৬১ সালে তিনি টাটা গোষ্ঠীতে যোগদান করেন।
২০১৭ সালে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরেও রতন টাটা কাজ করা থেকে বিরত থাকেননি। তিনি নতুন নতুন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেছেন এবং তাদেরকে বড় করার চেষ্টা করেছেন।